এবিএনএ: সন্তানের বাবা-মা হওয়া সহজ কিন্তু তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সঠিক ভূমিকা রাখা মোটেও সহজ নয়। কেননা আপনি নিজে পরিবারের মাধ্যমে যা জেনেছেন বা বুঝেছেন আপনি তা-ই আপনার শিশু সন্তানের ওপর প্রয়োগ করতে চান- তা ক্ষতিকর হোক আর উপকারী হোক। অর্থাৎ আপনি নিজের কথা বা কাজগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ না করেই তা প্রয়োগ করেন শিশুর ওপর।
শিশুরা তাদের পরিবার ও চারপাশের বিশ্বকে দেখে বড় হয়। পরিবারই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষাকেন্দ্র। ফলে তাদের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করতে হবে। প্রত্যেক শিশুরই যেকোনো বিষয়ে একটি নিজস্ব ভাবনা থাকে, লক্ষ্য রাখতে হবে আপনার আচরণে যেন তাদের ভাবনার জায়গাটি আক্রান্ত না হয়। কিছু বাচ্চা যথেষ্ট স্মার্ট যাদের কোনো প্রেরণা প্রয়োজন হয় না। অনেক শিশু রয়েছে যাদের উন্নতি প্রক্রিয়ায় একটু ধাক্কা প্রয়োজন হয়। উৎসাহব্যঞ্জক শব্দ ও ইতিবাচক চিন্তা তাদের দীর্ঘ পথে সহায়ক হতে পারে। ভুল হলে তাদের শিক্ষা দেওয়া যেমন প্রয়োজন তেমনি ভালো কাজে প্রশংসা করা উচিত। তবে সবার আগে প্রয়োজন তাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা। কীভাবে আপনার সন্তানের সঙ্গে আরো দক্ষ ও কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলবেন তার জন্য কয়েকটি টিপস দেওয়া হলো:
১। শিশুর মধ্যে যা কিছু ভালো তার প্রসংশা করুন।
২। শিশুদের জন্য ‘বিল্ডিং ব্লক’ অত্যন্ত উপকারী। এটি তাদের জ্ঞান সম্বন্ধীয় দক্ষতা বাড়াবে। আপনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন।
৩। তাদেরকেও চ্যালেঞ্জের আহ্বান জানাতে পারেন।
৪। উপযুক্ত পরিস্থিতিতে তাদের জ্ঞান সম্বন্ধীয় দক্ষতার পরীক্ষা নিতে পারেন।
৫। শিশু কঠিন কিছু করে ফেললেও তার প্রসংশা করুন। এতে তারা বুঝতে শিখবে কোনটি প্রসংশাযোগ্য কাজ।
৬। চেষ্টা করুন শিশু যেন তার নিজের সমস্যার সমাধান নিজেই করতে পারে। এতে চর্চাটি সে নিজে চালাতে পারবে এবং আপনাকে ছাড়াই সে চলতে শিখবে।
৭। কিছু সময়ের জন্য তাকে একা থাকতে দিন। একাকিত্ব তাকে শেখাবে কীভাবে সময়ের সদব্যবহার করতে হয় এবং আনন্দে থাকার উপায় বের করতে হয়।
৮। শিশুদের জন্য প্রতিদিনের রুটিন থাকা উচিত।
৯। সংগীত ও নৃত্যের ক্লাসে পাঠান শিশুকে। এতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটবে এবং ভালো কাজে উৎসাহিত হবে।
১০। শিশু যেন তার প্রতিদিনকার অসুবিধাগুলো আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে পারে সে ব্যাপারে তাকে উৎসাহিত করুন।
১১। আপনার নিজের অসুবিধাগুলোও তাদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
১২। সমস্যার সমাধান করুন একসঙ্গেই। এতে তাদের সামনে আসা সমস্যা তারা নিজেরাই মোকাবেলা করতে শিখবে।
১৩। অন্যকে আলিঙ্গনে উৎসাহিত করুন। এটি অন্যের প্রতি সমবেদনা শেখাবে।
১৪। আপনার শিশু যেন প্রতিদিনই আপনাকে কিছু সাহায্য করে। এতে বিষয়ের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা থাকবে এবং সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শিখবে।
১৫। পুরো পরিবারের রুটিনে শিশুকে সম্পৃক্ত করুন। এতে শিশুর নৈতিক মূল্যবোধ অর্জিত হবে।
১৬। খেয়াল করুন ঘুমাতে যাওয়ার আগে যেন শিশুর টেলিভিশন দেখার অভ্যাস গড়ে না ওঠে। এতে তার ভালো ঘুম হবে।
১৭। এই সত্যটি সবসময় প্রকাশ করুন যে আপনি তাকে ভালোবাসেন। ভালোবাসার চেয়ে ভালো কথা আর হয়ই না।
১৮। তাদেরকে শেখান যে পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেরাই একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বেঁচে থাকতে শিখবে।
১৯। তাদেরকে মেডিটেশন শেখান। এটি তাদেরকে শিথিল ও চাপমুক্ত রুটিন গ্রহণে সাহায্য করবে।
২০। বইপড়ায় উৎসাহিত করুন। এটি তাদেরকে সময় কাটাতে সাহায্য করবে, জ্ঞানচর্চায় প্রেরণা পাবে।
২১। ‘ভালো কাজ’ বলে কোনো শব্দ শেখানো থেকে বিরত থাকুন। বরং ভদ্রভাবে তাদের ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিন যাতে তার বুঝতে পারে কোনটি ভুল আর কোনটি সঠিক।